বামন শাহরুখের গল্প ‘জিরো’

দীর্ঘ দুই দশক ধরে উপমহাদেশের দর্শকদের রোমান্স, অভিনয় ও গালে টোল পড়া হাসি দিয়ে মাতিয়ে রেখেছেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। সেই দিওয়ানা (১৯৯২) ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের জগতে যাত্রা শুরু। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে, ম্যায় হু না, কাল-হো-না-হো, ভীর জারা, দিল তো পাগল হ্যায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায় এর মত ছবিতে প্রেমিক পুরুষ রুপে দর্শকরা দেখেছেন তাকে। তিনি অভিনয় করেছেন বাজীগর ও ডর এর মত ছবিতে খলচরিত্রেও। তবে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত একেবারেই বৃত্তের বাইরের কোন চরিত্রে শাহরুখকে দেখতে পারবেন দর্শকরা। ছবির নাম রাখা হয়েছে ‘জিরো’।
মোহাম্মদ রফির এক সুপরিচিত গান ‘ইস দিওয়ানে দিলনে ক্যায়া জাদু চালায়া’ গান সম্বলিত এক টিজারে বছরের শুরুতেই মুক্তি পেয়েছে। টিজারটি ইতিমধ্যে ইউটিউবে কোটির অধিক মানুষ দেখে ফেলেছে। টিজারের উল্লেখিত বিশেষণ পাগল, মেন্টাল, শায়র, ধোঁকাবাজ এর কোনটির সাথে শাহরুখের চরিত্রটি যায় তা এখনো পরিস্কার নয়।
ছবিতে প্রধান দুই নারী চরিত্রে বলিউডের দুই হেভিওয়েট ক্যাটরিনা কাইফ ও আনুষ্কা শর্মাকে দেখা যাবে। সব ঠিক ঠাক চললে এবছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে এই ছবি। ছবির গল্পে বামন শাহরুখ সুপারস্টার ক্যাটরিনার প্রেমে পড়ে। অন্যদিকে আনুশকা শর্মা পর্দায় আবির্ভুত হবেন একজন মানসিক প্রতিবন্ধীর চরিত্রে এমনটাই গনমাধ্যমে শোনা গিয়েছে।
রানঝানা, তানু ওয়েডস মানু এর দুই পর্ব করে খ্যাতিপ্রাপ্ত পরিচালক আনন্দ এল রাই ছবিটি পরিচালনা করছেন। ছবিটি নির্মানের পেছনের গল্পটি খুব মজাদার। পরিচালক একবার নিবিড় মনে কৃষ ছবি দেখছিলেন। ছবিতে হৃতিক রোশনকে ২৫০ ফিট বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখে প্রত্যেকের মত তার মনও আন্দোলিত হয়েছিলো। কিন্তু ভেতর ভেতর তিনি ভাবছিলেন এই সুপারহিরো তো আর বাস্তবে অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখেনা। সুপারহিরোর অপরদিকে ভাবা যেতে পারে মানবের অপূর্নতা, শারীরিক ত্রুটি কিংবা একজন বামনকে। বামনের দৃষ্টিতে জীবন দেখার ইচ্ছা থেকেই এই ছবিটি নির্মানের সূত্রপাত। পরিচালক রাইয়ের মতে “একজন খুঁতহীন সম্পূর্ন ব্যক্তি হওয়াতে বড়াইয়ের কিছু নেই। অসম্পূর্ণতা একটি আলাদা সৌন্দর্য আছে। আমরা সবাই মানব এবং জিরো আমাদের আদি থেকেই এসেছে। আমি ছবিটি নিয়ে জিরো কিংবা শূন্য ব্যাপারটাকে উদযাপন করতে চাই।“ প্রথমে ছবিটির নাম “ক্যাটরিনা মেরি জান” রাখা হলেও পরবর্তীকালে দর্শকদের চলচ্চিত্রটি ক্যাটরিনাকে নিয়ে তৈরি এমন ধারণাপূর্নক ছবির নাম পাল্টানো হয়েছে। ছবিটির জন্য তিনটি আলাদা নাম চিন্তা করে সেগুলোকে রেজিষ্টারও করা হয়েছিলো। শেষমেশ ভোটাভুটিতে জিরো নামটি জিতে যায়।
ছবিটির জন্য শুরুতে ২০১২ সালে সালমান খানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। পরে অনেক জল গড়ানোর পর ২০১৬ সালের মার্চে শাহরুখ খান ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধ হন। সুপারস্টার ক্যারিয়ারে শেষ কয়েক বছরে ফ্লপের তকমা গায়ে নিয়ে শাহরুখ এবারে চাচ্ছিলেন ব্যতিক্রম কিছু করতে। ‘জিরো’ এর চেয়ে আলাদা কিছু নেই বিধায় ছবিটি নিয়ে তিনি ঝাপিয়ে পড়েন এবং নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট থেকে ছবিতে লগ্নীও করেন। অবশ্য ছবিটিতে লগ্নীকারক হিসেবে ছবিটির পরিচালক রাইও রয়েছেন।
ভারতীর ছবির ইতিহাসে বামন চরিত্রে এর আগে তিনজনকে পর্দায় দেখা গেছে যারা হলেন আপ্পু রাজা ছবিতে কমল হাসান, আশিক ছবিতে জনি লিভার ও জানে মান ছবিতে অনুপম খের। ছবিগুলোর সময়ে কারিগরি ব্যাপারগুলো অতটা উন্নত না হওয়ার জন্য কতকটা হাটু ভাঁজ করেই অভিনেতাদের অভিনয় করে যেতে হয়েছিলো। তবে ‘জিরো’ ছবিতে শাহরুখকে তিন ফুটের বামন সাজাতে সাহায্য নেয়া হয়েছে বিশ্বমানের ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের। ফোর্সড পারসপেকটিভ নামক এক ধরনের অপটিকাল ইল্যুশন দ্বারা ছবিটির দৃশ্যধারন করা হয়েছে। ছবিতে লর্ড অব দ্য রিংস এর সমমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। ছবিতে সালমান খান, দীপিকা পাডুকোন, রানি মুখার্জী, কাজল, আলিয়া ভাট, প্রয়াত শ্রীদেবী, কারিশমা কাপুর ও জুহি চাওলাকে অতিথি চরিত্রে দেখা যাবে। এটিই হবে মৃত্যুর আগে শ্রীদেবীর সর্বশেষ চলচ্চিত্রে আবির্ভাব।
বলিউড বাদশাহ খান জানেন কীভাবে ভিন্ন কিছু করতে হয়। তবে ভিন্নধর্মী ‘জিরো’ দিয়ে ফ্লপ ও খারাপ ছবির তকমা ঘুচিয়ে শাখরুখের ভাগ্যের চাকা আবারো ঘুরবে কি! উত্তর মিলবে আসছে ডিসেম্বরে।

আর্টিকেলটি দৈনিক ভোরের কাগজে পূর্বপ্রকাশিত

লেখকের অনুমতি ছাড়া সাইটে ব্যবহৃত সকল প্রকার লেখা পুনঃপ্রকাশ বেআইনি। জরুরী যোগাযোগে ইমেইলঃ altamishnabil@gmail.com

আরো পড়ুন...