“বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা,
পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা
আর কানা পুলিশে ছুঁলে ৭২ ঘা”।
বলছিলাম এবারের ঈদে হইচই প্লাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ডিটেকটিভ ওয়েব সিরিজ ‘রুমি’ এর একটি সংলাপ। একজন ডিটেকটিভের প্রধান শক্তি যেখানে পর্যবেক্ষণ এই, সেখানে কোন গোয়েন্দা যদি তার চোখের দৃষ্টিই হারিয়ে ফেলেন সেখানে গল্পটা কেমন দাঁড়ায়! সিরিজটি নির্মাণ করেছেন ওটিটি প্লাটফর্মের মিষ্টার টুইষ্ট খ্যাত নির্মাতা ভিকি জাহেদ।
বিশ্ববিখ্যাত ফার্সি কবি মওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিকে বলা হয় প্রেম ও প্রজ্ঞার বার্তাবাহক। সেই রুমির উপর ভালোবাসা থেকেই এক মা তার সন্তানের নাম রাখেন খন্দকার রুমি (চঞ্চল চৌধুরী), এবং সেই রুমি বড় হয়ে সিআইবি’’র গোয়েন্দা হয়ে ওঠেন। সিরিজটির গল্প শুরু হয় রুমির ঘুমের মধ্যে দেখা মাকে হারানোর দু:স্বপ্ন দিয়ে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোট বেলা থেকে মায়ের কাছে বেড়ে ওঠা রুমি মাকে এক দূর্ঘটনায় হারিয়ে তার কারণ খুঁজে ফেরে কিন্তু এর সুরাহা হয়না। কিন্তু অপরদিকে দ্বায়িত্বে থাকা রুমির কাছে আসা কেসগুলোর সুরাহা তিনি করে ফেলেন অনেকটা হাসতে হাসতেই। সিরিজের প্রধান চরিত্র রুমি জন্মগত অন্ধ নয়, সে চোখ হারায় তার মায়ের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়েই। রোমাঞ্চে মোড়া এক আবহসঙ্গীতের সাথে সিরিজটির শুরু থেকেই উত্তেজনা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এই সিরিজটি। কাহিনী এগিয়ে যায় সিআইবির হাতে আসা অন্য কেসগুলোর সঙ্গে রুমির মায়ের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের সঙ্গে।
আগেই যেহেতু বলেছি, গোয়েন্দা চরিত্রের প্রধান হাতিয়ার পর্যবেক্ষনের জন্য যেহেতু সিরিজের রুমির নিজের চোখ ব্যবহারের সুযোগ নেই, তাই তিনি কেসগুলোর মিমাংশা করতে সাহায্য নেয় ইনটিউশন কিংবা অন্তদৃষ্টির। স্বপ্নে রুমি নানা ঘটনা দেখতে পায় যার সাথে মিলে যায় তার আশেপাশে থাকা কেসের নানা ঘটনা কিংবা তার মায়ের মৃত্যু রহস্যের। সিরিজটির প্রতিটি পর্বের বাংলা নামগুলো বেশ আলাদা! শরীয়ত, তরিকত, মোহাব্বদ অথবা মারেফতের মতো নামগুলো জালালউদ্দিন রুমির আধ্যাত্মিক দুনিয়াকে মনে করিয়ে দেয়। অন্তত আর যাই হোক, ফরাসি রুমী আর বাংলার এই রুমীর মেটাফোরগুলোর ব্লেন্ডিং বেশ প্রশংসনীয়।
রুমি সিরিজটি ভিকি জাহেদের সেরা কাজ কিনা সেটা নিয়ে তর্কে না গেলেও তিনি দর্শকদের ভিন্নধারার মানানসই এক গোয়েন্দা চরিত্রকে দুই বাংলার দর্শকদের উপহার দিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। চরিত্রের বৈচিত্র থাকলেও মিষ্টার টুইষ্ট পরিচালক ভিকি তার চেনা ফর্মুলার পথেই হেঁটেছেন যা তার পাড় ভক্তদের পছন্দ হলেও সমালোচকদের কাছে কিছুটা ক্লিশে লাগতেও পারে! সিরিজটির ক্যামেরায় বিদ্রোহী দীপন দারুণ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন, আবহ সঙ্গীতে ভালো ছিলেন অমিত চ্যাটার্জি। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় চঞ্চল চৌধুরীর ডেলিভারিগুলো দারুণভাবে উপভোগ্য ছিলো। আলাদাভাবে প্রশংসার দাবী রাখেন সিরিজটির এডিটর অর্নব হাসনাত।
ছয় এপিসোডের এই প্রথম সিজনের ‘রুমি’ ওয়েব সিরিজটি শেষ হয় একটা অপ্রত্যাশিত টুইষ্ট দিয়ে। তবে দর্শক হিসেবে বোধ হচ্ছিলো, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে বানানো এই সিরিজের টুইষ্টটি ওপার বাংলার দর্শকদেরকেও সিরিজটিতে টেনে আনার প্রচেষ্টায় দেয়া হয়েছে। বিষয়টা মানানসই নাকি বেখাপ্পা সেটার ভার দর্শকদের কাছেই থাকলো। তবে বাংলা গোয়েন্দা ভক্তদের জন্য নতুন এক গোয়েন্দার সন্ধান দেবার জন্য পরিচালক ভিকি জাহেদ’কে জানাই টুপিখোলা অভিবাদন।
আর্টিকেলটি দৈনিক ভোরের কাগজে পূর্বপ্রকাশিত

